ওশানটাইমস ডেস্ক : ১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার, ১৪:০৮:০৭
রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আরএমআইটি) গবেষকরা সমুদ্রের পানি থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন তৈরির একটি সস্তা, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। তাদের এ পদ্ধতি সবুজ হাইড্রোজেন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন পদ্ধতিতে সমুদ্রের পানি থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় পানিকে লবণমুক্ত করার প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হয় না।
নতুন এ পদ্ধতির বিষয়ে গবেষণাগার পর্যায়ে সমীক্ষা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি উইলি জার্নাল, স্মল-এ প্রকাশিত হয়েছে।
হাইড্রোজেনকে দীর্ঘকাল ধরে একটি ভবিষ্যৎ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি বিমান ও জাহাজ শিল্পকে কার্বনমুক্ত করার সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই দুই ধরনের যানে এত বেশি শক্তির প্রয়োজন, যা নবায়নযোগ্য অন্য কোনো শক্তি দিয়েই পূরণ করার কথা কেউ ভাবতে পারেন না।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব হাইড্রোজেনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয়, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস (হাইড্রোকার্বন) থেকে। গ্যাস থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করার জন্য বছরে প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে, যা যুক্তরাজ্য ও ইন্দোনেশিয়ার সম্মিলিত বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য।
কার্বন নির্গমনমুক্ত সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয় পানিতে তড়িৎ বিশ্লেষক (ইলেকট্রোলাইজার) ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় পানিকে ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হয়। তবে এ পদ্ধতি এতই ব্যয়বহুল যে, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য নয়। বিশ্বব্যাপী মোট হাইড্রোজেনের মাত্র ১ শতাংশ এই পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন করা হয়।
আরএমআইটির ভাইস চ্যান্সেলরের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্রধান বলেন, সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল এবং বিশুদ্ধ পানির ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎস হিসেবে হাইড্রোজেনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এমন অনেক শিল্প রয়েছে, যেগুলোতে সহজেই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু সত্যিকার অর্থে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হওয়ার জন্য আমরা যে হাইড্রোজেন ব্যবহার করি, তার উৎপাদন ১০০ শতাংশ কার্বনমুক্ত হতে হবে। পাশাপাশি মূল্যবান স্বাদুপানির মজুদে হাত দেওয়া যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্রের পানি থেকে সরাসরি হাইড্রোজেন তৈরি করতে আমাদের পদ্ধতিটি বর্তমানে বাজারে থাকা যেকোনো সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন পদ্ধতির তুলনায় সহজ এবং অনেক বেশি সাশ্রয়ী। আমরা আশা করি, এটি অস্ট্রেলিয়ায় সমৃদ্ধ সবুজ হাইড্রোজেন শিল্পপ্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেবে।’
পানিকে ভাঙতে অনুঘটক (ক্যাটালিস্ট)
বিদ্যমান সবুজ হাইড্রোজেন তৈরির পদ্ধতিতে ইলেকট্রোলাইজারের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকে আলাদা করা হয়।
ইলেকট্রোলাইজারগুলোতে বর্তমানে ব্যয়বহুল অনুঘটক ব্যবহার করা হয়, যা প্রচুর শক্তি এবং পানি খরচ করে। এক কেজি হাইড্রোজেন তৈরি করতে প্রায় ৯ লিটার পানি প্রয়োজন। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে পাওয়া যায় ক্লোরিন, যা বিষাক্ত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রক্রিয়ায় কেবল কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ঘটে না, পাশাপাশি ক্লোরিনও উৎপাদন করে না। কারণ নতুন পদ্ধতিতে তারা সমুদ্রের পানির সঙ্গে বিশেষভাবে কাজ করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের অনুঘটক ব্যবহার করেছেন। এই অনুঘটক সাশ্রয়ী উপায়ে তৈরি করা যেতে পারে।
এই অনুঘটকটি হলো নাইট্রোজেন-ডোপড পোরাস নিকেল মলিবডেনাম ফসফাইড। এই উপাদান বড় আকারে উৎপাদন করা অনেক সহজ। সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করলে খুব অল্প জ্বালানির প্রয়োজন।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এই প্রযুক্তিটি ইলেকট্রোলাইজারের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের খরচ কেজিপ্রতি ২ ডলারে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকারের। তাদের এ পদ্ধতি ওই লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট।
আইএমআইটির গবেষকরা এই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকগুলো উন্নয়নে শিল্প অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছেন। গবেষণার পরবর্তী পর্যায় হলো একটি প্রোটোটাইপ ইলেকট্রোলাইজার তৈরি করা। নতুন এই পদ্ধতির জন্য একটি পেটেন্ট আবেদন করা হয়েছে
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন, হাইড্রোজেন
For add