ওশানটাইমস ডেস্ক : ৯ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৫:৪৯:১৮
এত দিন বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে গভীর সাগরের জলরাশি ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতেন লাখো পর্যটক। এখন জাহাজে বসে গভীর সমুদ্র থেকে পাহাড়, দ্বীপ ও সৈকত দেখছেন পর্যটকেরা।
শীতের এই মৌসুমে বঙ্গোপসাগর অনেক শান্ত। শান্ত সাগরে বসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকেরা চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। দিনব্যাপী ভ্রমণের এই সুযোগ করে দিয়েছে ‘ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজম’ নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে তারা সাগরে নামিয়েছে ২০০ জন ধারণক্ষমতার জাহাজ ‘এসটি শহীদ সুকান্ত বাবু’।
আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত জাহাজটির সাগরে চলাচলের সরকারি অনুমোদন আছে। এই জাহাজে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেই। গত ২০ দিনে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার পর্যটক জাহাজে চড়ে সমুদ্রভ্রমণের অন্য রকম আনন্দ উপভোগ করেন। ভ্রমণ করতে মাথাপিছু ভাড়া গুনতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা করে।
প্যাকেজের আওতায় সকাল ১০টায় জাহাজটি বিমানবন্দর সড়কের নুনিয়ছিটা তিন রাস্তার মোড় বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে যাত্রীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শহরের বাঁকখালী নদী, নদীতীরের মিনি সুন্দরবনখ্যাত প্যারাবন, দেশের সর্ববৃহৎ নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লি ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জল ছুঁয়ে উড়োজাহাজ নামার জন্য নির্মিতব্য রানওয়ে প্রকল্প দেখানো হয়। এরপর জাহাজটি বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির জেটিতে। জেটির দুই পাশে ঘন সবুজ প্যারাবন। সেখানে নেমে যাত্রীরা যান ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পর্বতের চূড়ায় স্থাপিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দিরে। মন্দিরের পাশে আছে রাখাইনপল্লি।
পর্যটকদের নিয়ে জাহাজ আবার আদিনাথ জেটি থেকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে যায় সোনাদিয়া দ্বীপের দিকে। মুক্তা ও শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ সোনাদিয়ার সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ পর্যটকদের বিমোহিত করে।
এরপর কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টের সামনে দিয়ে জাহাজটি বেলা দেড়টা নাগাদ পৌঁছে দক্ষিণ দিকের হিমছড়ি ঝরনা এলাকায়। সেখানে পর্যটকদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন থাকে। এরপর যাত্রা করে জাহাজটি বিকেল পাঁচটা নাগাদ পৌঁছে বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটছে। সৈকতের পানিতে নেমে গোসল, বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসহ দর্শনীয় কিছু স্থান পরিদর্শন ছাড়া বিনোদনের তেমন কিছু নেই। পর্যটকের চাহিদা পূরণে সমুদ্রবিনোদনের এ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।
সপরিবার জাহাজে চড়ে গভীর সমুদ্র ঘুরে আসতে পেরে খুশি কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিলু বড়ুয়া। তিনি বলেন, মাথাপিছু ১ হাজার ২০০ টাকায় তারা ভালোভাবে ভ্রমণ করতে পেরে আনন্দিত।
আরেক পর্যটক স্কুলশিক্ষক সুজাতা বড়ুয়া বলেন, প্রমোদতরিতে বসে উপকূলের গাছপালা, পাহাড় আর সমুদ্রসৈকত অন্য রকম মনে হয়েছে। গভীর সাগর থেকে বালুচরে দাঁড়ানো পর্যটকদের পিঁপড়ার মতো দেখায়। সাগরে ডলফিনের বিচরণ, নৌকা নিয়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্ত- সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা খুবই ভালো।
ঢাকার মীরপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল আশরাফ বলেন, তিন বছর পর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন তিনি। সমুদ্রভ্রমণের জন্য প্রথমে তাঁদের দ্রুতগতির স্পিডবোটে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল। যখন জাহাজে সমুদ্রভ্রমণের ব্যবস্থার কথা শুনলেন, তখন এখানেই চরে বসলেন। গভীর সমুদ্র থেকে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এককথায় অপূর্ব বলে মত তার।
সূত্র: প্রথম আলো
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: কক্সবাজার, কক্সবাজার সৈকত, সমুদ্র ভ্রমণ
For add