ওশানটাইমস ডেস্ক : ১০ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৩৬:০৫
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নিজামপুর উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম চলছে। উপকূলীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠা ২০টি মহালে শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে। এ বছর চার হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ২৫ হাজার জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। আবহাওয়া ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদনের আশা করছেন তারা।
মৎস্য অধিদফতর ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ের নিজামপুরের পল্লিতে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। এখানে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে শুঁটকি তৈরির ঘর নির্মাণ এবং মাছ আহরণ শুরু করেছেন জেলেরা। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম তারা। এই কর্মযজ্ঞে জড়িত উপকূলের ২৫ হাজার মানুষ। তাদের সঙ্গে এই পেশায় জড়িত আরও অনেকে।
উপজেলা মৎস্য অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে চার হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদন হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুঁটকি পল্লিতে কর্মযজ্ঞ চলছে। রোদে মাছ শুকাচ্ছেন কয়েকজন। কেউ শুকানো মাছ থেকে প্রজাতি আলাদা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় মাছ শুকানোর মাচা তৈরি করেছেন। মাছ রাখা ও নিজেদের থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর করেছেন। কেউবা আবার মাছ ধরার ট্রলার মেরামত করছেন। মাছ ধরার ট্রলার সাগরে নামাচ্ছেন কেউ কেউ। সাগর থেকে আহরণ করা লইট্টা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চাপিলা ও ফাইস্যাসহ হরেক রকমের মাছ বাঁশের তৈরি মাচায় ঝুলানো কিংবা বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলেদের এই পেশা একমাত্র অবলম্বন। আট থেকে ১০ জন শ্রমিক গ্রুপভুক্ত হয়ে কাজ করেন। কোনও কোনও গ্রুপে ১২-১৫ জনও কাজ করেন। অন্তত ৪০০টির মতো গ্রুপ কাজ করছে। কাঁচা মাছের সরবরাহ ভালো থাকলে সবার মুখে হাসি ফুটবে। এখন পর্যন্ত সবার জালে মাছ ধরা পড়েছে।
জেলেদের দেওয়া তথ্যমতে, শুঁটকি শুকানোর কাজ চলবে প্রায় পাঁচ মাস। এই সময়ে কয়েক হাজার মণ শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। এখানকার শুঁটকি প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকানো হয় বলে সর্বত্র চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে লইট্টা, চিংড়ি, সোনাপাতা, ছুরি ও পোয়া শুঁটকির চাহিদা বেশি।
শুঁটকি পল্লিতে কাজে ব্যস্ত থাকা আব্দুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি। সাগর থেকে মাছ ধরে পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করি। কোনও কোনও মাছের পেট কেটে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকাই। কোনও ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এজন্য এখানের শুঁটকির চাহিদা বেশি।’
শুঁটকি পল্লির আরেক শ্রমিক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনে পাঁচ মাস শুঁটকি তৈরি করবো। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী, মাছ ধরা পড়ছে। আশা করছি, লাভবান হবো।’
নিজামপুর শুঁটকি পল্লির শ্রমিক আলাউদ্দিন ঘরামি বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করতে চাই আমরা। কিন্তু আমাদের প্রতি নজর দেয় না সংশ্লিষ্টরা। আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়তো। এতে শ্রমিক এবং জেলেদেরও কষ্ট কম হতো, সবাই লাভবান হতো।’
শুঁটকির আড়তদার ইসহাক হাওলাদার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার লোক কাজ করছেন। এখানে কোনও কোনও দিন দুই কোটি টাকার বেশি শুঁটকি বিক্রি হয়। এখন মৌসুম শুরু হলো। এবার সবকিছুর দাম বেশি। তাই শুঁটকির দামও বাড়বে। প্রতি মণ চিংড়ি শুঁটকি ২৮ হাজার ও লইট্টা ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে জানিয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম। শুঁটকি তৈরির জন্য আমরা জেলেদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিই। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
সূত্র: বাংলাট্রিবিউন
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: কুয়াকাটা, কুয়াকাটা সৈকত, শুঁটকি, শুঁটকি পল্লি
For add