মো: মনিরুল ইসলাম : ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৯:৩০:৪১
সাতক্ষীরার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা শ্যামনগরের নীলডুমুরে। সুন্দরবনের পেটের মধ্যের এক গ্রাম। এর পরে আর বসতি নেই বললে চলে। নদী পার হলেই ঘন বন। প্রকৃতির পাশাপাশি এখানকার হাজারো মানুষের লড়াই করতে হয় সুপেয় পানির জন্য। গোসল বা রান্নার বিশুদ্ধ পানি সেখানে বিলাসিতা! লবণ পানির বিষে ডায়রিয়া, চুলকানির মতো রোগ তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী। উপায়ন্তর না দেখে সুপেয় পানির জন্য এখন পাড়ি দেন কয়েক কিলোমিটার।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের উপকূলবর্তী জেলাসমূহ বিশেষ করে সাতক্ষীরায় নিরাপদ খাওয়ার পানির ব্যাপক সংকট চলছে বহু বছর ধরেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ জেলাটি প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কারণে লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে মিষ্টি পানির জলাশয়গুলো বিনষ্ট করে। কমায় মিঠা পানির উৎস। আরও প্রবল হয় সংকট। অনেক ক্ষেত্রে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়েও সুপেয় পানি মেলে না। বাধ্য হয়েই পান করতে হয় লবণাক্ত পানি। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পুকুর ও নলকূপের মতো মিঠা পানির উৎস দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছে দূষিত পানি পান করতে। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ঘায়ের মতো রোগ বাড়ছে।
জানা যায়, সরকারকে সহায়তার জন্য বেসরকারি খাতের নিরাপদ খাওয়ার পানির প্রকল্প ‘প্রবাহ’ সাতক্ষীরার লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছে। নামমাত্র মূল্যে এ প্রকল্পের পরিশোধন প্ল্যান্ট থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে পারছেন স্থানীয়রা। প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরার আশাশুনি, নলতা ও শ্যামনগর উপজেলায় আধুনিক রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তির মোট চারটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। নিরাপদ খাবার পানির জন্য কমে এসেছে তাদের দৈনিক ব্যয়। রান্নার মতো গৃহস্থালির কাজের জন্যও এ পানি ব্যবহার হচ্ছে। এতে পানিবাহিত রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে অনেক পরিবার।
স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় লবণাক্ত পানির পরিমাণ বেড়েছে। শুধু খাবার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্ল্যান্টগুলো থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। তবে রান্না ও আনুষঙ্গিক সব কাজেই ব্যবহার হয় লবণাক্ত পানি। এতে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকদের কাছে যেতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
পানি নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে লবণ পানি খেতে হতো, তাতে অনেক কষ্ট হতো। বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি রেখে খেতাম। এখন এটা (প্রবাহ প্ল্যান্ট) হওয়ায় এখান থেকে পানি নেই। এক ড্রাম ১০ টাকা দিয়ে নিতে পারি, যা দিয়ে কয়েকদিন চলে যায়। এই পানি শুধু খাই, আর রান্না, গোসল সব লবণ পানি দিয়েই। এই পানির লাইন হওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে। লবণ পানি খেলে ডায়রিয়াসহ অনেক রোগ হয়, এখন সেই সমস্যা নেই।
সম্প্রতি জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ আকাশলীনা ইকো পার্ক ও নীলডুমুর জেলা পরিষদ পুকুরে আলাদা দুটি আধুনিক প্রযুক্তির সুপেয় পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে প্রবাহ। প্রতিটি প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন হচ্ছে।
‘প্রবাহ’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সমস্যার পরও দুর্গম এলাকায় এ ধরনের প্ল্যান্ট পরিচালনা করছে প্রবাহ। অনেক সময় এখানে বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকলে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন সম্ভব হয় না। নীলডুমুর, দ্বীপ অঞ্চলগুলো এবং সুন্দরবনের ভিতর থেকে যারা নৌকা নিয়ে আসে তাদের জন্য রাস্তার পাশে আলাদা একটি কালেকশন সেন্টার রয়েছে প্রবাহের। তাদের পাইপের মাধ্যমে পানি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নিরাপদ খাবার পানি, নিরাপদ পানি, বিশ্ব পানি দিবস, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা, সুন্দরবন
For add