ওশানটাইমস ডেস্ক : ১৮ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার, ৪:২০:০৪
ময়মনসিংহের ত্রিশালে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ফসলি জমির মাটি ও বনের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি।
অনুমোদনহীন এসব ভাটার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমিতে। বেশির ভাগেরই নেই কোনো লাইসেন্স, পরিবেশ বা কৃষি ছাড়পত্র।
জাতীয় পর্যায়ের একটি পত্রিকার অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ত্রিশাল উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৫৩টি ইটভাটা। এগুলোর মধ্যে ৩৫টি জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইন্সেবিহীন অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বৈধ ১৮ ইটভাটাও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে লাকড়ি। এগুলোর বেশির ভাগই ফসলি জমির পাশে স্থাপন করা হয়েছে। সেসব জমিতে এখন রোপা আমন ধান রয়েছে। ফলে ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
এদিকে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহারের কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি। কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে লাকড়ি। ফলে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে উজাড় করা হচ্ছে এলাকার গাছপালা ও পাশের বনাঞ্চলের কাঠ। শুধু তাই নয়, এসব ইটভাটায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের কারণে ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বইলর ইউনিয়নের হদ্দেরভিটা গ্রামের সনি ব্রিকস ইটভাটাটি ফসলি জমির মধ্যে। সেখানে দিনরাত পোড়ানো হচ্ছে ইট। পাশেই মাঠজুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালি ফসল। ফলে ভাটার আগুন ও নির্গত হওয়া কালো ধোঁয়ায় ধানক্ষেত নষ্ট হওয়া নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা রাগামারা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মিত হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া একটি ইটভাটার আশপাশে প্রায় ২০ একর জমিতে কোনো ফসল ফলানো যায় না। এ কারণে এলাকায় চাষাবাদের পরিমাণ আগের চেয়ে কমে আসছে।
উপজেলার বইলর ইউনিয়নের কাজী শিমলা গ্রামের বুলবুল আহমেদ, মো. হানিফ বলেন, লোকালয় ঘেঁষে আবাদি জমিতে এভাবে ইটভাটা নির্মাণের বিপক্ষে এলাকার কৃষকরা। কিন্তু ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ করতে একাধিকবার প্রশাসনকে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাটা বন্ধের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তা ছাড়া ভাটাগুলোতে প্রতিদিন ট্রাকে করে লাকড়ি এনে স্তূপ করে রাখলেও প্রশাসনের নজরে আসে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অথবা নদীতীরে পতিত জমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সরকারি সড়ক দিয়ে নয়, বরং ইটভাটার নিজস্ব রাস্তা দিয়ে চলবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। সেই সঙ্গে ইটভাটায় খনন করতে হবে পুকুর। অথচ এসব শর্তে কোনোটিই মানছেন না ভাটার মালিকরা। মাটি বহনের ট্রাক্টরগুলো অনেক সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়েই চলাচল করে। এতে জনসাধারণসহ যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাটার মালিক বলেন, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটভাটাগুলোতে লাকড়ির ব্যবহার হচ্ছে বেশি। এসব লাকড়ির বেশির ভাগই টাঙ্গাইলের বন থেকে সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক উপসচিব দিলরুবা আহমেদ বলেন, ‘নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদনকৃত সবাইকে লাইসেন্স দিতে পারিনি। তবে অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ স্থান, স্কুলের পাশে বা ফসলি জমির ভেতরে ইটভাটা থাকলে আমরা তা ভেঙে দিচ্ছি। ’
সূত্র: কালেরকণ্ঠ
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: ইটভাটা, কাঠ, ত্রিশাল, পরিবেশ-দূষণ, ময়মনসিংহ
For add