ওশানটাইমস ডেস্ক : ২ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১৪:৩৪:৫৮
ভূমিকম্প আতঙ্কে যখন কাঁপছে দেশ, তখন আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র চলছে ইলেক্ট্রনিক অ্যাসিস্টেন্টের মতো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে। প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক দাবি করেন, নিম্ন পদের লোক দিয়ে যদি কাজ সারা যায় তবে বড় পদের লোক নিয়ে সরকারের ‘মানিটা’ লস করবো কেন?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংস্থাটির ১০টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সেন্টার রয়েছে। সারা দেশ থেকে পাওয়া ভূমিকম্পের তথ্য পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন মাত্র একজন আবহাওয়াবিদ। তার সঙ্গে সদ্য যুক্ত করা হয়েছে আরেকজন সহকারী আবহাওয়াবিদকে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এদিন বিকেল ৪টা ৩৯ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলো। স্থানীয় সূত্র থেকে খবর পেয়ে ঘটনার দুই ঘণ্টা পর সত্যতা যাচাইয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয় বাংলাভিশন। নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরে কল করলে রিসিভ করেন ইলেক্ট্রনিক অ্যাসিস্টেন্ট জসিম উদ্দিন। কল ধরেই প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে মনে হয় কেঁপে উঠলেন তিনি। কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে তারপর দিলেন ভূমিকম্পের তথ্য। যা আগেই পাওয়া যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভূমিকম্প পর্যক্ষণকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে।
এটি এক দু’বারের ঘটনা নয়। আবহাওয়া অফিসের বিশেষায়িত এই শাখায় ফোন করে কখনোই পাওয়া যায় না কোনো বিশেষজ্ঞকে। অধিকাংশ সময় ভুমিকম্পের তথ্য দেন ইলেক্ট্রনিক এসিসটেন্ট, অফিস সহকারী বা ওয়ারলেস অপারেটররের মতো তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। ওয়েবসাইটেও নিয়মিত আপডেট হয় না ভূমিকম্পের তথ্য। অফিসে গিয়েও মেলে না কর্মকর্তাদের দেখা।
এদিনও ঘটেছে তেমনই ঘটনা। ভূমিকম্প সম্পর্কে জানতে প্রথমে আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে যাই আমরা। ওয়েবসাইটটির বাংলা ভার্সনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে সর্বশেষ ভূমিকম্পের ঘরে ২০২০ সালের ২৫ মে’র একটি ভূকম্পনের তথ্য দেওয়া। সেটিও ছিল ইংরেজিতে।
ঘটনার পরদিন রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। এদিন সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে আরও একটি ভূকম্পন হয় ঢাকা থেকে মাত্র ২১৭ কিলোমিটার দূরের শেরপুর সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের মেঘালয়ে। ঘটনার তথ্য জানতে এবার আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে হাজির বাংলাভিশন। সাংবাদিক দেখে রিতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দায়িত্বরত কর্মীরা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র আবহাওয়াবিদ রুবাঈয়্যাৎ কবীর নেই জানিয়ে বলা হয় অপেক্ষা করতে। আধাঘণ্টারও বেশি সময় পর আসেন অধিদফতরের প্রশাসন বিভাগে কর্মরত এই গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাইরে আছেন জানিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হন তিনি। কেন এই অবস্থা জানতে চাইলে ত্রুটি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এই কর্মকর্তা।
আবহওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার জন্য কতটুকু উপযুক্ত জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ (প্রশাসনিক বিভাগ) মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ১৯৯৪ সাল থেকে সার্ভিস দিয়ে আসছি কোনো সমস্যা নেই। ওরা তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে পারে। আপনার যদি বিশেষজ্ঞের মন্তব্য প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। ’
এরপরে সমস্যা জানাতে অধিদফতর প্রধান মো. আজিজুর রহমানের কক্ষে যাই আমরা। প্রথমে কোনো ত্রুটি নেই বলে দাবি করেন তিনিও। যদিও ওয়েবসাইট খুলে দেখানোর পর আপডেট না থাকার জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করেন তিনি।
বলেন, ‘আবহাওয়াবিদতো দূরের কথা একজন সহকারী আবহাওয়াবিদ দিয়ে চলছে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। একারণে কখনো কখনো মিস হয়ে থাকতে পারে।’
তবে দেশের বর্তমান অবকাঠামোগত উন্নয়নের তুলনায় জনবল পর্যাপ্ত কিনা জানতে চাইলে কথা ঘুরিয়ে ফেলেন তিনি। এবার জনবল সংকটের কথা অস্বীকার করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘এই সিসমিক মনিটরিংয়ের জন্য ৫০ জন আবহাওয়াবিদের প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি, ৫০ জন আবহাওয়াবিদ যদি এখানে সরকার দেয়ও সেটা নিলে সরকারের মানিটা লস হবে। কারণ আরও নিম্ন পদের জনবল দিয়ে এই কাজটা চালাতে পারবো।’
ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট হয় দাবি করে তিনি বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলেই আমরা সাথে সাথে ওয়েবসাইটে দেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমে তথ্য পাঠাই।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিরা যথাযথ তথ্য দিতে না পারলে বা কোনো বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদদের ব্যক্তিগত নম্বরে অথবা তাঁর নম্বরে কল দেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।
(বাংলাভিশনে প্রকাশিত)
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: Kafayet shakil, Kafayet Ullah Chowdhury, আবহাওয়া অধিদফতর, কেফায়েত শাকিল, ভূমিকম্প, ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র
For add