জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক-একক প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কার্যকর নীতি এবং পরিকল্পনার পাশাপাশি বৈশ্বিক উদ্যোগের সাথে একক দেশের প্রচেষ্টার সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু, জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, তাই এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হতে হবে। শুধুমাত্র যদি বিশ্বব্যাপী এবং পৃথক দেশের প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করে কার্যকর নীতি, পরিকল্পনা এবং কার্যকর শাসন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তবেই কর্ম প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

দুর্যোগ সহিষ্ণু অবকাঠামো সংক্রান্ত ৫ম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রচারিত একটি পূর্বে ধারিনকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আজ এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোনো উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন এবং সহিষ্ণু অবকাঠামোর জন্য সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময়ের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অপ্রত্যাশিত সংকট মোকাবেলায় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার এবং সম্মতি অপরিহার্য।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সকলের জন্য একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একই সাথে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপক রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনায় এই বিষয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে।’

সরকার প্রধান আবারও আমাদের সবার জন্য একটি উন্নত বিশ্ব নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি এই সময়োপযোগী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের জুলাই মাসে এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনাকাঙ্খিত জলবায়ু বিপর্যয় ও দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আমাদের প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং এই আঘাত ও চাপ সহিষ্ণু শক্তিশালী এবং ভৌত অবকাঠামো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব তুরস্ক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে বিশাল ভূমিকম্প, ক্যারিবিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় হারিকেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যার মতো সিরিজ বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছে।

তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছি, যার ফলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের বিনিয়োগকে রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতের সমস্ত অবকাঠামো নির্মাণ এবং সিস্টেমগুলোকে অবশ্যই দুর্যোগ সহিষ্ণু হতে হবে।’

জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, খরা এবং বজ্রপাতের মতো ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইপিসিসি রিপোর্ট-২০২২ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে জিডিপির ২ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ শুরু হয় ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেন।

এই কর্মসূচির আওতায় বঙ্গবন্ধু উপকূলীয় এলাকায় এক হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন, তিনি আরো বলেন, জনগণ এই কেন্দ্রগুলোকে ‘মুজিব কেল্লা’ বলে ডাকত।

তিনি বলেন, এর আগে ১৯৭০ সালে, একটি প্রলয়ঙ্কারি জলোচ্ছ্বাস প্রতিকূলতা সহিষ্ণু অবকাঠামোর অভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দশ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের সরকার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে। এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com