নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ নভেম্বর ২০২২, সোমবার, ১২:১০:১৩
ঢাকায় চলছে তিন দিনব্যাপী ‘বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২২’। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর আয়োজনে সোমবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে শুরু হওয়া এই কনভারসেশন শেষ হবে বুধবার। তিন দিনব্যাপী এই কনভারসেশনে বিভিন্ন দেশের পরিবেশ গবেষক, সমুদ্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পেশার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নিচ্ছেন।
সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সভার কার্যক্রম। এ সময় কনভারসেশনের মূল বক্তব্য প্রদান করেন সার্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি বরিস তাদিস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন সিজিএস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর এ চৌধুরী।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় জিল্লুর রহমান বলেন, যুগ যুগ ধরে বঙ্গোপসাগর একটি সমন্বিত এবং পরস্পর নির্ভরশীল অঞ্চল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ফলে এবং শহর ইউরো-আটলান্টিক থেকে ভূ-কৌশলগত পরিবর্তনের কারণে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, বাণিজ্য এবং আন্তঃসীমান্ত অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ হুমকির মুখে। জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, পরিবেশগত অবক্ষয় এবং বারবার জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা এখানে রয়েছে।
অভিবাসী সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। উপরন্তু, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বিশ্বের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ বাস করে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি দরিদ্র এবং খাদ্য ও শক্তি অনিরাপদ। উপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের বাসস্থান। উন্নয়ন খাতে পরিবেশগত প্রভাব, যেমন কৃষির ফলন হ্রাস, দরিদ্র শ্রম উৎপাদনশীলতা এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যগত প্রভাবের কারণে, এই ধরনের চাপের সাথে মোকাবিলা করার জন্য দেশগুলোর ক্ষমতা গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারের মতো মানবিক সংকটের ফলে সন্ত্রাসবাদ এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সাইবার ক্রাইম এবং মানবপাচারের মতো আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো এলাকাজুড়ে সমানভাবে কঠিন হয়ে উঠেছে।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বর্ধিত সংযোগের মাধ্যমে বৃহত্তর একীকরণ প্রয়োজন। সাগরমালা প্রকল্প, এশিয়া-আফ্রিকা গ্রোথ করিডোর নতুন পশ্চিম ও মাস্টার প্ল্যানের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা সীমানার ভিতরে এবং সীমানার মধ্যে সংযোগ বাড়ানো সম্ভব একইভাবে, সমুদ্র সংযোগ করিডোর এবং সামুদ্রিক সংযোগ রয়েছে।
যুদ্ধ এবং মহামারি সত্ত্বেও, শেষ পর্যন্ত এই আঞ্চলিক সহযোগিতা সংলাপের আয়োজনে সহযোগিতা করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
নিজের বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশ সার্বিয়ার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন সার্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি বরিস তাদিস। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আজ। বর্তমানে নিরাপদ পানি, নিরাপদ জ্বালানি ইত্যাদির সংকট রয়েছে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের জন্য বোঝা হলেও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বরিস বলেন যে, জনসংখ্যা হলো জনশক্তি। বাংলাদেশের এই অধিক জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এজন্য টেকসই উন্নয়ন দরকার আর টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক সংহতি দরকার।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত খাত উন্নত করা এবং পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে আলোচনা কারও পরামর্শ দেন তিনি। পুরো বক্তব্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন সার্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মনজুর এ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ হলো শক্তিশালী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং চীনের মধ্যে অবস্থিত যারা সর্বদা ভূ-রাজনীতিকে সরব করে রাখে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, সুশাসন, সংযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন এবং এই সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এ সম্মেলনে বিশ্বের ৭০টি দেশের ২০০ প্রতিনিধি ছয়টি বিষয়ের ওপর আলোচনা করার কথা রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, বণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও আয়ের সমতা উন্নতির প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে আলোচনা এ সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে।
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন, সমুদ্র সংযোগ, সিজিএস
For add