ওশানটাইমস ডেস্ক : ১ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১০:৫২:৪১
এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারছেন না দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল নামলেও এবার চিত্র থাকছে ভিন্ন শূন্যতায়।
বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের নদ-নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। আগামী ৩১আগস্ট পর্যন্ত থাকবে এ প্রজনন মৌসুম। ফলে প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে সাগর ও সুন্দরবনের নদী-খালে জেলেদের মাছ শিকার ও পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা চলছে।
বিশেষ করে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বনবিভাগ। ফলে চলমান নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়াতে গত ২০মে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে একাত্মতা রেখে সুন্দরবনের নদী-খালেও প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতে সুন্দরবনে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি মাছ শিকারও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আর মূলত ১লা জুন থেকে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, যা বলবৎ থাকবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। ফলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেউই সুন্দরবনে মাছ শিকার ও ভ্রমণে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছের প্রজনন স্বাভাবিক রাখতে গত ১লা জুন থেকে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত পর্যটকবাহী নৌযান সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।’
এর ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় জুড়ে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ও ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য জেলে ও দর্শনার্থীদের কোন ধরনের অনুমতি/পাস-পারমিট দেয়া হবে না। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর গোলাম রহমান বিটু বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে টানা ৭মাস বন্ধ ছিলো সুন্দরবন ভ্রমণ। এরপর ২০২০ইং সালের ১নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিন পর হলেও প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে।’
‘ওই সময়ে অবসাদ কাটাতে অনেকেই সুন্দরবনে বেড়াতে আসেন। এরপর গত ২০২১ ও ২০২২ইং সালের জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমেও টানা তিন মাস সুন্দরবন ভ্রমণ বন্ধ থাকে।
তবে আবারও সুন্দরবনে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আসায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। আসন্ন ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসতেন।
তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভ্রমণ করতে পারবেন না তারা। অন্তত ঈদের ছুটির তিনদিন সুন্দরবন খুলে দিলে তাদের সংকট কিছুটা মোকাবিলা করা যেত বলে জানান এ পর্যটন ব্যবসায়ী।
এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, মাছের প্রজনন মৌসুম ও বংশ বিস্তারে ১লা জুন থেকে সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পর্যটকেরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।
বন্ধের এ সময়টাতে বনের অভ্যন্তরের পুরোনো পর্যটন স্পটগুলোর সংস্কার, আধুনিকায়ন ও নতুন আরও চারটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পর্যটন স্পটগুলো হচ্ছে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের শেখেরটেক, আলীবান্ধা, কালাবাড়ী ও কৈলাশগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্রে।
এই পর্যটন স্পটগুলো নির্মাণ হলে বিশ্ব ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি সুন্দরবনের প্রতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। এই পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট আছে। এগুলো হলো করমজল, হাড়বাড়ীয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, নীলকমল ও কলাগাছিয়া।’
‘তবে সহজ ও সময় কম লাগার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বেশি আসেন করমজল ও হাড়বাড়ীয়া ইকো ট্যুরিজম পর্যটন স্পটে।’
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: Harbaria Eco Tourism Center, Sundarban, tourism, পর্যটন, সুন্দরবন
For add