জাহাজ বন্ধ, ঈদের ছুটিতে সেন্ট মার্টিন যেতে পারেননি পর্যটকরা

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা অনেকের আগ্রহ থাকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ঘুরে দেখার। নীল জলে স্বচ্ছ পানিতে নেমে শরীর ভেজানোর ইচ্ছাও থাকে প্রবল। কিন্তু টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এ ঈদে দ্বীপে ঘোরার সুযোগ পাননি পর্যটকেরা।

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। শনিবার ঈদুল ফিতরের দিন। দ্বীপের পুরো সৈকত ফাঁকা। দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, টানা ১২ দিনের দাবদাহে মানুষের অবস্থা নাজুক। তবে শুক্রবার রাতের একপশলা বৃষ্টিতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। শনিবার সকালে দ্বীপের একাধিক মসজিদে ঈদের নামাজ শেষে বাসিন্দারা এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরেফিরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করছেন।

বর্তমানে দ্বীপে একজন পর্যটকও নেই জানিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান জানান, দ্বীপের ২৩০টির বেশি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ খালি পড়ে আছে। ঈদের সময় দুটি জাহাজ চালু থাকলে অন্তত এক হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ হতো। তাতে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো চালু রাখার পাশাপাশি দ্বীপের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা থাকত।

দ্বীপের পূর্ব সৈকতে তিনতলার আবাসিক হোটেল ব্লু মেরিন। হোটেলে ৭০টির বেশি কক্ষ থাকলেও কোনোটিতে অতিথি নেই। পশ্চিম সৈকতের তিনতলার কিংশুক হোটেল, তিনতলার হোটেল অবকাশ, তিনতলার আটলান্টিক রিসোর্টেরও একই অবস্থা। ঈদের ছুটির কয়েক দিনে কোনো হোটেল কক্ষ বুকিং নেই।

আটলান্টিক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোলেমান জানান, গত ৩১ মার্চ থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। তখন থেকে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন আসা-যাওয়া করতে পারছেন না। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত দ্বীপের দুই শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ খালি পড়ে থাকবে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, এখন ২০টির বেশি কাঠের ট্রলার ও ৫০টির মতো দ্রুতগতির জলযান স্পিডবোট নিয়ে স্থানীয় লোকজন টেকনাফ সদরে আসা-যাওয়া করছেন। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকে। এ সময় ঝড়-তুফানের শঙ্কা থাকে। এ কারণে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এখন ছোট নৌযানে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে স্থানীয় লোকজন সেন্ট মার্টিন আসা-যাওয়া করছেন।

মুজিবুর রহমান বলেন, সাগর উত্তাল হলে ছোট আকৃতির নৌযানগুলো ঢেউয়ের ধাক্কায় দুলতে থাকে। স্থানীয় লোকজন এ পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও পর্যটকের পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়। এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব নৌযানে পর্যটক পারাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বর্তমানে সেন্ট মার্টিনে কোনো পর্যটক নেই।

জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশের (স্কুয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, পর্যটন মৌসুমের পাঁচ মাস (নভেম্বর-মার্চ) টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। সাগর উত্তাল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কায় গত ৩১ মার্চ থেকে এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে ১ এপ্রিল থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাস সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সীমিত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, প্রতিবছর কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ২৭ লাখের বেশি পর্যটক। এর মধ্যে অন্তত ১৫ লাখ পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেন। এই ঈদের ছুটির ১০ দিনে কক্সবাজারে অন্তত ৮ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজের ৭৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অধিকাংশ পর্যটক কক্ষ বুকিং দেওয়ার সময় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ এবং সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াতের সুযোগ নেই জানতে পেরে হতাশ হচ্ছেন।

 

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com