ওশানটাইমস ডেস্ক : ৪ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার, ৫:৫৩:৩১
পর্যটননগরী কক্সবাজারে আমূল পরিবর্তন আনবে রেল যোগাযোগ। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে যাওয়া যাবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দর্শনে। মিটার গেজ লাইনে বসবে বিশেষ সুবিধা সম্বলিত আরামদায়ক ট্যুরিস্ট কোচ। লাইন দিয়ে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। ২০২৩ সালের জুনের পর রেল যোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজার অফ সিজনেও পর্যটক টানবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পর্যটকদের জন্য বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা ও সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হলে পর্যটনে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে করা দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। রেল যোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজার অফ সিজনেও দর্শনার্থী টানবে। পর্যটকদের খরচ কমবে। তবে পর্যটকদের সেবার মানের দিকে সরকার ও হোটেল মালিকদের নজর দিতে হবে। পর্যটন শুধু কক্সবাজারকেন্দ্রিক করলে হবে না, সারাদেশের পর্যটন বিকশিত করতে হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ আছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। এই দূরত্বে ৯টি স্টেশন হবে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী ও ৯টি স্টেশন পাড়ি দিয়ে রেলপথটি পৌঁছাবে কক্সবাজার।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চালুর আশা করছি। আগস্টের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবো।
কক্সবাজারের ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক ভবন। দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন এটি। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। ভবনটি হবে ছয়তলা, এর সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। দর্শনার্থীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন।
স্টেশনটিতে পর্যটকরা লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। স্থাপনাটিই একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য এতে রাখা হয়েছে অভ্যর্থনা কক্ষ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিংমল, তারকামানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ।
জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে মানুষ সাধারণত শীতকালে যায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ স্পটে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। রেল চালু হলে দর্শনার্থীরা নিরাপদে ও কম খরচে কক্সবাজার যেতে পারবেন। এটা আরও বেশি জমজমাট হবে।
তিনি আরও বলেন, রেল যোগাযোগের ফলে বিলাসবহুল বাস কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্লেনে আর কতজন যায়, বাসেই বেশিরভাগ মানুষ যায়। বাস অপারেটরদের ব্যবসা কমে যাবে। আবার বেশি লোক গেলে হোটেলগুলো তাদের রেট বাড়িয়ে দেবে। এমনিতে অধিকাংশ হোটেলের সার্ভিস ভালো নয়। দর্শনার্থীদের ভালো সেবা নিশ্চিত করতে হলে হোটেলগুলোর সার্ভিস ভালো করতে হবে, পাশাপাশি সেখানে বিনোদনের উপকরণ বাড়াতে হবে।
ট্যুরিজম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিডিএবি) উপদেষ্টা জামিউল আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে ট্যুরিস্টের অভাব নেই। এটার যে কেয়ারিং ক্যাপাসিটি আছে সেটা অলরেডি ওভার হয়ে গেছে। রেললাইন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, সহজ হবে। কিন্তু কক্সবাজার এরই মধ্যে ওভারলোডেড বা মাস ট্যুরিজম হয়ে গেছে। দেশীয় পর্যটক সেখানে এমনিই যাচ্ছে। বিদেশি পর্যটক টানতে হবে, সেই মানের কোনো কিছু আমরা করতে পারছি না।
‘পর্যটনের উন্নয়নের জন্য দেশি পর্যটকদের নতুন নতুন ডেস্টিনেশন দিতে হবে। পাশাপাশি কক্সবাজারে বিনোদনের অনুষঙ্গ বাড়াতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
For add